এসব এলাকার অন্তত পাঁচ শতাধিক বাড়ির উঠানে থৈ থৈ করছে পানি। ভুক্তভোগীরা রাস্তা থেকে ঘরের দরজা পর্যন্ত যেতে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। প্রতিটি বাড়িতেই উঠানের ওপর বাশের সাঁকো। এ সাঁকো দিয়ে বৃদ্ধ, শিশু ও নারীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন।
এছাড়া পানির তোড়ে ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। তলিয়ে যেতে বসেছে যাতায়াতের রাস্তা। ঢেউয়ের আঘাতে সড়কের বিভিন্ন জায়গা ধসে পড়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ভবদহ অধ্যুষিত অভয়নগরের আন্ধা, বেদভিটা, ডুমুরতলা, ডহর মশিয়াহাটি, সুন্দলী এবং মণিরামপুর উপজেলার হাটগাছা, মশিয়াহাটি, সুজাতপুর, পাঁচাকড়ি, লখাইডাঙ্গা, বালিধাসহ বেশ কিছু গ্রামে ঘুরে জলাবদ্ধতার এ চিত্র দেখা গেছে।
এবার ভয়াবহ ও স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা। তাদের আশঙ্কা, ২০১৬ সালের ন্যায় এবারও তাদের বাড়ি-ঘড় ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিতে হবে।
এসব এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাড়ি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। থমকে যেতে বসেছে সাধারণ কর্মকাণ্ড। পানিতে টইটুম্বুর আমডাঙ্গা খালের ডহর মশিয়াহাটি অংশ। সেই সাথে কচুরিপানা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) খামখেয়ালিপনার কারণে অপরিকল্পিত এ খালের একাংশ খনন করায় এবং অপর অংশে খনন সম্পন্ন না করায় পানি বের হতে পারছে না। তাছাড়া ওই এলাকার খালগুলো থেকে নেট-পাটা অপসারণ না হওয়ায় এবং ঘের মালিকদের যথেচ্ছাভাবে ঘেরের বাঁধ দেয়ায় জলাবদ্ধতা আরও স্থায়ী রূপ নিচ্ছে বলে আক্ষেপ করেন তারা।
তাদের দাবি, আমডাঙ্গা খালটি পরিকল্পিতভাবে খনন করে ভৈরব নদীর সাথে সংযোগ ঘটাতে পারলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে বৃহৎ এ অঞ্চলের মানুষ রক্ষা পেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ভবদহ অধ্যুষিত এ বৃহৎ অঞ্চলের মানুষদের জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে অব্যাহতভাবে আন্দোলন সংগ্রাম চলে আসছে।
ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন আন্দোলন কমিটির ব্যানারে ভবদহ অঞ্চলে টিআরএম বাস্তবায়নের দাবিতে বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত টিআরএম বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির বৈঠকে টিআরএম বাস্তবায়ন ও আমডাঙ্গা খাল পুন:খননের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এদিন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল খাল খননের নামে কোটি কোটি টাকা জলে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
এছাড়াও কমিটির পক্ষ থেকে ভবদহের জলাবদ্ধা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হিসেবে টিআরএম প্রকল্প চালু করা, আমডাঙ্গা খাল প্রশস্তকরণ ও খননের দাবিতে ১ সেপ্টেম্বর অভয়নগরে মানববন্ধন ও ২ সেপ্টেম্বর যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ পাউবো’র উদাসীনতা ও খামখেয়ালীপনা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বার্থান্বেষী মনোভাবের কারণে ভবদহ অঞ্চলে টিআরএম বাস্তবায়ন হচ্ছে না এবং আমডাঙ্গা খাল যথাযথ পরিকল্পনা মাফিক খনন হচ্ছে না।